শনিবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৫

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ছেঁড়া চিরকূট


অনেক ভালবাসা রইলো তোমার খোঁপায় গোঁজা ফুলে,  
তোমার নোলকে রেখে দিলাম আমার উষ্ণ চুম্বন,
সন্তানদের স্কুল বাসে তুলে দিয়ে-
খাটে গড়িয়ে গড়িয়ে যখন পড়বে প্রিয় কবির বই
আমি ধূলো হয়ে জড়িয়ে থাকবো তোমায়
আর সন্ধ্যেতে যখন বেরুবে অফিস ফেরৎ স্বামীর সাথে
সান্ধ্য ভ্রমণে-
আমি তখন হাওয়া হয়ে উড়াবো, তোমার কপালের চুল
তুমি ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না,
আমি তোমাতে জড়িয়ে আছি
কলেজ ফেরৎ রাস্তায় ফুচকা খাচ্ছিলে বান্ধবীদের সাথে,
সেই প্রথম তোমাকে দেখা

তোমার কন্ঠস্বর আমি শুনেছি দূর থেকে বহুবার
আমাদের মধ্যে কথা হয়নি,
এমনকি পরিচয়ও হয়নি সামনাসামনি
এমনকি আমি তোমায় কাছে পেতে চাইনি কখনো
অথচ, লেখকের বই থেকে বেরিয়ে তুমি হেঁটে গেছ
আমাদের বাড়ীর অন্দরে-বাহিরে
আমি ছায়ার মতো হেঁটেছি তোমার পাশে ;
সেদিনও তুমি টের পাওনি, অন্যদিনের মতো

তোমার রচয়িতাকে আমি দেখিনি কখনো
কিন্তু এক জীবনে কত আর বইতে পারা যায়
একাকী
ভালোবাসার গল্প নয়
একটি গল্প ভালোবাসার ?

শুক্রবার, নভেম্বর ২৭, ২০১৫

স্বীকারোক্তি

শিয়রের পেছনে দাঁড়ালে
সন্ত্রাসী মনে হয়।
কখনো পেছনে কাউকে
সহ্য হয় না।
রোজ ভোরে নিজ চরণ দর্শণ,
পূবাকাশে চোখ রাখা আমার
আবাল্য বিলাসিতা।

রোজ রাতে বাড়ি ফেরার পথে
ডাস্টবিনে ফেলে আসি
অনেকটি অমাবস্যা। কখনো
আমি চাইনা, তোমার আঁচল
থেকে পূর্ণিমা খসে পড়ুক।
জ্যোৎস্নাময় তোমার মুখ দেখে
ঘুমুতে যাওয়া ভুল হয়না কখনো।

তারপরও হিমোগ্লেবিনের পরিমাপ
জোট সরকারের মতো,
বড্ড যন্ত্রনায় ফেলে দিচ্ছে বারবার !


বুধবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৫

একটি ময়নাতদন্ত সংবাদ

মৃত্যুর কথা ভেবে ক্লান্ত হতে চাইনা ;
অনিবার্য সব আমার দিকে ধাবিত হউক।
অমল ভান্ডে আমি জমিয়ে রাখি
প্রতিশোধ স্পৃহা।

আমার পিতাই আমার ঈশ্বর।
তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্ক
দু'জনই এড়িয়ে চলি, নিদারুণ।
অমিলতা আমাদের সেতুবন্ধ।

পেছন ফিরে দেখা কখনো ফিরে আসা নয়
নাভিমূলে দারুণ এক মোচড়,
বরং আড়চোখে তাকানো বহুমাত্রিক
নিখুঁত ভাঁজ এঁকে দেয় কপালে ।

উজ্জ্বল লালটিপ কখনোই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নয়
তা কেবল অন্ধকারকে দীর্ঘায়িত করে চলেছে,
সমাবেশ ফেরত মুখগুলোতে তাকালে
চোখ নেমে আসে পায়ের পাতায়।

হে সড়ক, তোমায় সষ্টাঙ্গ প্রণাম ।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত

অনেকগুলো প্রাণ চেয়ে আছে আকাশের দিকে
দিনরাত তাদের প্রতি সজাগ থাকতে হচ্ছে,
সদ্যজাতের মতো পরিচর্যায়
তাদের বেড়ে ওঠা দারুণ উত্তেজনাময়।

স্ত্রীর চোখেমুখে অমল হাসি অনেকটা দীর্ঘ,
এবার শীতে বরাবরের মতো-
পড়শিদের জানালাগুলোতেও ছড়িয়ে পরবে
আমাদের ছোট বাগানের রঙ।

মা, তোমার অাঁচল জেনো আগলে রেখেছে সব ;
বাবা, তোমার নামে বাড়ীর নামকরণ করেছে-
অলকাপুরী। সেখানে
তোমার অনুপস্থিতি বিকট এক শূণ্যতা।

তোমার হয়ে প্রক্সি দেয়ার কাজ মোটেই সহজ নয়।
বাবা, গতকাল সে দায়িত্ব দিতেই ডানকাঁধটা বেশ
টনটন করে উঠলো কিছুক্ষণেই। ক্লান্তি আমায় শত্রু
করে তুলতে পারে, অলকাপুরীতে সে সুযোগ নেই।

উত্তরাধিকার সূত্রে, বাবার বইয়ের আলমারিগুলো
আমার দিকে হেলে আছে অনেকদিন আগেই।

একটি আধেক স্বপ্ন ও হাহাকার

বাতাসের ভেতর ঢেউয়ের মতো আসছে নানা শব্দ
উঠোন, বারান্দা জুড়ে জায়গা কুলোচ্ছে না
দুয়ার খুলে সামনে এসে দাঁড়াতেই
সব নির্বাক, নি:শব্দ, চুপ
মুহুর্তে সব কোথায় মিলিয়ে গেল,
প্রচন্ড এক আলোক গোলক ছুটে চলল তীব্র গতিতে
একটানা চলার পর তা মিলিয়ে গেল,
সামনে এক কুয়াশামাখা সবুজ মাঠ
তাতে নানাজন হেঁটে বেড়াচ্ছে,
উজ্জ্বল সব সাদা পোশাক
কোনটাই চেনামুখ নয়
একটা বেঞ্চে কে একজন মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে
কালো চুলের আড়ালে তার একপাশের গাল দেখা গেল
ঠোঁটের কাছে একটি গাঁঢ় কালো তিল
খুব চেনা চেনা লাগলো দূর থেকে
ঘুরে তাকালো, ঠোঁট নাড়লো,
কিছু বললো, শোনা গেল না ;
একবার শুধু ডাকলাম, 'মা'
তারপরই একটা ঝাকুনি, মেয়ে বলছে-
'স্যারের বাড়ির সময় হয়ে গেছে ওঠো'।

আর কখনো ওইখানে ফিরে যাওয়া হলো না
কোনো কসরৎই কাজে এলো না
শুনতে না পাওয়া ওই অস্পষ্ট ধ্বনির
ভাষান্তর সম্ভব হলো না আজও!

ভৌতিক চরাচর

চারদিকে হিংসা, ধ্বংস, হাহাকার, 
কোলাহল,
বিকট শূণ্যতা !

এরই ফাঁকে কারা যেন বাতাসে 
ভাসায়ি চলে ভালবাসার গান,
তার গায়ে বিদ্রোহের চাপা গন্ধ !

রাজধানী, জাতীয় সড়ক, সংবাদপত্র
সভা-মিছিলের পদভারে
ক্লান্ত, বিমূঢ়, হতবাক্।

মিছিল ফেরৎ লোকজন দরদাম
শেষে বাজার বয়ে ফিরে যায়
নিজস্ব আস্তনায়, অভ্যাস মতো !

আশা ও কামনায় ফুরিয়ে ফেলা জীবন
নিয়ম করে একদিন মুছে যায়
রেশনকার্ডে।

ঠাকুর্দার বাবার নাম ক'জনা মনে করতে পারে !

আরশি কথা

তোমার কাছে যাব বলে হাত বাড়াইনি
তোমাকে ছুঁয়ে দেখব বলে হাত বাড়াইনি
বহু বছর যাবৎ আমায় অনুসরণ করে করে 
তুমি কতখানি ক্লান্ত 
তা শুধু দেখছি।

রূপকথা / ১

ডুবছি ক্রমাগত বিপুল
জলরাশির অতলে
কি জেনো টেনে নিচ্ছে
ভেসে ওঠার কোনো সুযোগ নেই

জলতলে বালির খাঁজে আটকে একটি নাকছাবি
তাতে কয়েক যুগের দীর্ঘশ্বাস
এইমাত্র অতিক্রম করলাম
বিসর্জনের দিন ঘাটের ভিড়ে কারা যেন বলাবলি
করছিলো, মায়ের মুখের সাথে নাকছাবিটা দারুণ মানিয়েছে

অইটুকু শুধু
মনে হলো, ঘূর্ণির পাকে সেঁধিয়ে যাবার আগে।


একান্তে

কোপাইতে মন চাইলো
বেধড়ক কোপালাম।
এবার শীতে বাগান ভরে যাবে 
নানা রঙে,
ছোট ছোট চারাগুলোর গায়ে
ভোরের শিশির
মনটাকে বড্ড নরম করে দেয় ;
প্রতিটির নামকরণ সারা হলে,
বাবার পায়চারী দেখবো, এবারকার
শীতের বিকেলে।