শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫

একটি সাক্ষাৎকার

চোখে চোখ রাখ, চোখ নামিও না প্লিজ 
যা বলতে চাও, সোজাসুজি, স্পষ্ট বলো।

উচ্চারণ আগে নিজের কানে তুলে নিও,
বিড়বিড় করা এখন আর মানায় না।
নিজের ভেতর মুক্ত হতে সময় লাগে,
সব কপাট ক্যাজুয়ালি খোলে না। সব
জানালায় সমান আলো আসে না।
সরলরেখা টানা সহজ নয় মোটে।

কে মাপে কাকে? জীবন চক্রাকারে ঘুরছে।
গতি, ঘূর্ণন শূন্যের মান নির্ভর।
আমি ও আমার গণ্ডির বাইরে যে সকল
বৃত্ত, সেখানকার আলো আরও অনেক স্বচ্ছ।
অনেক উজ্জ্বল।
চোখে জমা ময়লা আড়াল করে দেয়,
অসীম চরাচর।
আকাশ আর পৃথিবীর মাঝে লটকে থাকা
প্রাণের খেলা, বড় রোমাঞ্চকর।
বড় রহস্যময়।

চোখে চোখ রাখ, চোখ নামিও না প্লিজ
যা বলতে চাও, সোজাসুজি, স্পষ্ট বলো।
সরলরেখা টানা সহজ নয় মোটে।

গান্ধর্বলিপি

হাঁটতে হাঁটতে দেখা, যা ছিল অচেনা
পরিচয় পর্বেই তাড়া লাগালো
ঘড়ির কাঁটা,
প্রভাত ফেরি রোদ ওঠার সাথে
শেষ করতে হয়। আলোতে মানুষের
ক্ষিধে পায়, ব্যাস্ততা বাড়ে পথের।

একাকী দিন, প্রগাঢ় অন্ধকারে

কখনো তো চাইনি ফুলেল পথ
তা বলে এতো কাঁটা বিছানো হবে?

পাংচারের তালিতে ভরাট পা দু'খানা
লাফিয়ে চলেছে অন্দরে-বাহিরে।

রক্তমাখা পুরনো ব্যান্ডেজে ভরে আছে
নিগমের আঁস্তাকুর সেই জন্মকাল থেকে।

জগৎ মাতার পুজো প্রদর্শনে রাস্তা
এঁটে দিচ্ছে জ্যামার সব ব্যাস্ত পায়ে।

পাহাড়ের জল ও সমতলে স্নানযাত্রা
এখনও নিয়ন্ত্রিত বেনিয়ার দূরবীণে।

কালভার্টের ঢাকনা তুলে একাকী
সেঁধিয়ে যায় দিন, প্রগাঢ় অন্ধকারে।

কখনো তো চাইনি ফুলেল পথ
তা বলে এতো কাঁটা বিছানো হবে?

প্রত্যাশা

প্রিয় ফুল, তোর পথ চেয়ে আছে
বাগানে প্রতিবেশি সব কোমল চারা।
দু'হাত ভরে মাটিতে মেশাই তোদের
বেড়ে ওঠার সমস্ত সম্ভাবনা।


ফেউয়ের নব্য প্রভুকে

হাতি-ঘোড়া কত গেল তল
মন্ত্রীর শিক্ষা বলে হাঁটু জল !

ফেউয়ের তালে নাচে সে দিগ্বজ
অনিল আকাশ জুড়ে,
বুদ্ধির ঢেঁকি সব মাথা দোলায়
পশ্চাতে লাথির ভয়ে।

হাতের কালি মুখে মাখলো
টেবিলে উল্টে দিয়ে দোয়াত,
চিকন হাসির রোল উড়লো
গলি থেকে ফুটপাত।

সেন্সর কাঁচির উত্তরপুরুষ
হতে চেয়ে যত হাঁকডাক,
বিদ্যার দৌঁড় বিদ্যাটিলায়
অন্ধকূপে. চিচিং-ফাঁক।

হাতি-ঘোড়া কত গেল তল
মন্ত্রীর শিক্ষা বলে হাঁটু জল !

এক উৎসব সন্ধ্যার উপহার

তোমাদের কুশল সংবাদ কোথাও ভিত্তি- 
প্রস্তর সুগঠিত করে তোলেনি।
নির্মাণের স্বপক্ষে দাঁড়ানো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
থমকে যাচ্ছে, বারবার, আরতির আদিখ্যেতায়।
আর প্রণামীর বাক্স উপচে পরা ভীতি-শঙ্কা
ভক্তির উষ্ণতা মেপে চলছে অবিরত।

হুস হুস শব্দ তুলেও তাড়ানো যাচ্ছে না
বহুকালের মজ্জাগত অভ্যাস ও ধারণা।
পরিবর্তনের হাওয়া ঝোলা-বন্দী করে যতই
ঘোরাফেরা করো,
মুখ খুললেই কানে লাগছে, শূণ্যকলসের ধ্বনি।

পুরনো সিলেবাস, কুঁচকে যাওয়া ত্বকের বিজ্ঞাপন।
শীতবস্ত্রে ঘুণ কাঁটার শব্দ আটকায় না। রাত যত
গভীরে যায় দেয়াল ঘড়ির আওয়াজ স্নায়ুতে বিকট ঠেকে।
মা বলতেন,' উৎসবে সামিল হতে যদি না পারো,
অপরিচিত হলেও শেষযাত্রায় সঙ্গ দিও।'

মঞ্চশোভিত পুরনো মুখগুলো আজকাল বড্ড অপরিচিত ঠেকে,
কন্ঠ নিসৃত কোনো বাক্যে কোথাও শ্রমের ঘাম নেই। আমি আর
কখনো উৎসবে যাবনা, মা।

একটি জরুরীকালীন বিজ্ঞপ্তি

আগুন, আমাদের সব নিলো,
মুক্তি দিল না।

তার মাঝে রয়ে গেলাম আজন্ম,
শীতার্ত সব মুখ ঘুরছে চারপাশে।

কোলাহল ভেঙে দিল স্বেচ্ছা-নির্বাসন;
বারান্দায় ছড়িয়ে পড়লো লাল-মাটি।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা গুটি কয়েক রঙীন
চপ্পল, সৌজন্যতা মেপে নেমে গেল ধীরে।

ভুল বানানে ভরা সংবাদপত্রে লেপ্টে
রইলো প্রাত্যহিক বিকট সব অন্ধকার।

ভাগাভাগির ষড়যন্ত্রে মেতে থাকা মানুষ
আগামীর কবর খুঁড়ছে নিয়মিত, নিদারুণ।

আগুন, আমাদের সব নিলো,
মুক্তি দিল না।

বন্ধু তোকে

ক্ষিধে পেলে স্কুলব্যাগে উঁচু হয়ে থাকা
টিফিন বক্স এখনো চোখে ভাসে,
যা আমরা ভাগ করে খেয়েছি বহুদিন।

তুই কি এখনও মাখিস জ্যোৎস্না দিয়ে
ভরদুপুর, ঝাল ঝাল চালতার আচার,
তোর সঙ্গ পেতে কত ভোর হয়েছে
মাঝরাতে।

আমাদের অভিমান হলো, ঝগড়া হলো না।
বাড়াবাড়ি রকম ইর্ষা ছিলো আশেপাশে,
কপালে ভাঁজ পরা সহপাঠীরা-
দেখা হলে অপেক্ষা করে কখনো তোর প্রসঙ্গ
তুলি কিনা, মাঝেমধ্যে দু’একজন তোর কথা
বলে আর তাদের প্রতি করুণা বেড়ে যায়।

‘একটি মেয়ে একটি ছেলের কখনো
বন্ধু হতে পারেনা’
এধারণার মৃত্যু হয়নি এখনও ।
লেবেল পাল্টে পাল্টে বেঁচে আছে
প্রাগৈতিহাসিক সব ভাবনা।

আমাদের শতবর্ষ পুরনো স্কুল
নতুন দালান নতুন রঙে সেজেছে দারুণ।
এবার শীতে বাড়ি এলে তুই চিন্তে পারবি না
কিছুই। তোকে অপেক্ষা করতে হবে বর্ষা
আসা অব্দি, পুরনো নর্দমাগুলো ঢাকনা ঠেলে
তখন পরিচয় মেলে ধরে।

এক বুড়োভাম ও ইনবক্স

আমি তাই যা তুমি ভেবে না পাও কূল
ভাবছি এই শীতে তোমার গোড়ায়
খানিকটা জল ঢেলে আসবো

পিছলে পরে তোমার অবশিষ্ট দাঁত
ঝরে গেলে
ভুলেও মঞ্চে উঠো না হে বর্ণচোর

তোমার উচ্চারণ উদ্ধারে তুমিই ছিঁড়বে
নিজ পরিধেয়...
তারচে' অবসরকালীন জীবনে যেখানে
যেখানে মেখেছো কালি তা তুলে দেখো

তোমার ঝুলি থেকে কিছু হলেও নেমে
যেতে পারে অভিসম্পাতের বোঝা
কলতলা চেটে যা কুড়িয়েছ এতকাল।

ফের যদি ইনবক্স জ্ঞান দিতে আস
চোখ পরীক্ষা করে নিও
তোমার চোখে বিজল নেই।

রূপকথার জলছবি

প্রগাঢ় অন্ধকার।

তোমাদের উজ্জ্বল মুখ
পথ দেখালো এতকাল।

ঈশ্বর অই পথ ধরে
খেয়ে গেল প্রদেয় ভোগ।

বেদনার ভিড়ে আটকে রইলো
আরোগ্যশালার সিঁড়ি।

বাড়ী ফেরার পথে ঘোড়াগুলো
কেবল ঘাড় উঁচিয়ে রইলো।

একটিরও পা নেই। শিল্পী স্বপনের
তুলি এর একমাত্র মলিন স্বাক্ষী।

একথা উড়াউড়ি করছিলো-
জনসভার শূণ্য ময়দানে।

ঘুমের ভেতর বিকট স্বপ্নের উড়াউড়ি

তুমি মারছো তুমি কাটছো
আমি নিজেকে জড়ো করলাম
তোমাদের খাবারের প্লেটে।
শেষ মাংসটুকু কামড়ে ছিঁড়ে
হাড় ছুঁড়ে দিলে
তোমার পোষ্য তা লকলকে
জিহ্ব দিয়ে চাটলো।

তুমি উঠে এসে
তাকেও মারলে তাকেও কাটলে
খাবার টেবিল ভিজে গেল
তোমাদের লকলকে জিহ্বের লালায়।

কিছু সময় বাদে কতগুলো শকুন
উড়ে এসে ঘিরে রইলো সেই
খাবার টেবিল
কিন্তু, কিছুই মুখে তুললো না।

একটা সময় মর্গের গাড়ী এলো
বেওয়ারিশ লাশের মতো
তোমাদের দেহ নিয়ে গেল
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল রাস্তা।

কতগুলো কাক তারস্বরে চিৎকার
করে এলোমেলো উড়লো আকাশে
তারপর উড়ে চলে গেল
উত্তরদিকে।

একটি সুসাইড নোট

অনেক সিপিএম দেখা হল
অনেক কংগ্রেস দেখা হল
গন্ডাখানেক নকশাল
জোট, মহাজোট এমনকী
মোদী সরকারও ;
অভয়ারণ্যে আমাদের ছুঁড়ে
ফেলা হয়েছে, খাদককে তৃপ্ত করতে।

অংশীদারির ভাগাভাগিতে খামারে খামারে
রক্তারক্তি
রক্তের জোগান ঠিক রাখতে আমরা
বংশবৃদ্ধি করে চললাম। খামারগুলোর আয়তন
পৃথিবীকে ছোট করে দিল।

ক্ষিদের জ্বালায় আমরা কামড়াচ্ছি নিজেদের
আর রক্ত-কান্নায় লেখা হচ্ছে, উন্নয়ন গাঁথা !

জন্মব্যাধি

আমি ভাবছি ঘুম আসবে কখন
তুমি চাইছো আরো গল্প করতে
আসলে দু'জনই চাইছি- পরিত্রাণ।
ত্রাণ চেয়ে ঈশ্বর এখন নিজেই দিশেহারা ;
আমার খিস্তি বা তোমার ধূঁপধূনো
কোনটাই তার কানে পৌঁছাবে না।

সৌজন্য সাক্ষাতকার

ফিরে আসবো বলে পা বাড়াইনি
ফিরে আসবো বলে হাত রাখিনি হাতে
তোমরা ভাবছো না জানি কি সব
পথ আগলে দাঁড়ালে
পথ যাবে বেঁকে
পায়ের সাথে পা মেলাতে পার
নয়তো সরে দাঁড়াও।

উত্তর প্রজন্মের চাকা অনেক গতিশীল
যদি এখানে থেমে যেতে সাধ জাগে
তা'লে পেছন থেকে ডেকো না
থেমে যাওয়া মৃত্যুর সমান
একথা অগ্রজরা লিপিবদ্ধ করেছেন।

শোক ও বিসর্জন ছাড়া আর সবেতে
হাততালি শ্রুতিকটূ নয়
দৃষ্টির আড়ালে বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক
সংশয় আর সন্দেহের প্রাচীর
শূণ্য দশকেও বাড়িয়ে চলেছে উচ্চতা।

জঙ্গলের রাত দীর্ঘ হচ্ছে সেসকল স্থানে
ধর্মের মানব যেখানে বাড়িয়েছে হাত
একথা আজ সকলেই জানে
অথচ, বেড়িতে জড়িযে চলেছে
নিজ মানবধর্ম।

সুরক্ষাকবচ সংগ্রহে উন্মাদের দলে
আজ কোনো জাতীয় সংগীত নেই
হয়তো ছিলো কোনোদিন।

ধূলো দাও নিকোনো উঠোন

বেজে ওঠোরে মাদল,
কানে কানে গোঁজা ফুল 
কোমড়ে গুঁজে ফেলে কাপড়
বিভাবরী পায়ে মিলিয়েছে পা, 
হাতে হাত নিয়েছে তুলে,
ওরে ঝুমুর ওরে সুধা দুলে দুলে ওঠো,
ধূলো দাও নিকোনো উঠোন ;
আমাদের কোনো বিসর্জন নেই,
আমাদের সবেতে আবাহন ।

শনিবার, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫

একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি

বৃষ্টি হলে ভিজতে হবে
অনেকদিন জ্বর হয় না
কোনো কথা শুনবো না
জ্বর নেই তবু জিহ্বে বিস্বাদ
রুচি ফেরাতে এই শীতে
পাখি তোর সাথে তুমুল
কথা কাটাকুটি হবে
পাহাড় চূড়ায় কমলা ক্ষেতে।

ঝগড়া করতে খোলা মাঠে
যাওয়া জরুরী
বসতি এলাকায় শীত বৃষ্টি
দেরিতে আসে।
বৃষ্টির কখনো জ্বর হয় না
জ্বর, আমাদের হয় শুধু !

এবার শীতে রাস্তায় আগুন
ঘিরে রাতের কুন্ডলী দেখতে
পেলে আম-জনতার দীর্ঘশ্বাস
তোমারও জ্বর তুলে দেব
হে নগর প্রভু,
বিনা-নোটিশে।
জনতার জিহ্বের বিস্বাদে
চাপা পরার আগে
নিজেকে সজাগ রাখা জরুরী।

ঘুমের ভেতর কয়েক পংক্তি

ঘুমিয়ে গেলে ডাক দিওনা আমায়
শরীরে ফিরে আসতে হবে অসময়ে

গুলিবিদ্ধ হতে পারি ধর্মান্ধের হাতে
তা'বলে কি ভালবাসতে ভুলে যাব

আগুন নিয়ে খেলা দেখাচ্ছ প্রভু সেজে
প্রতিঘরে আগুন আগলে রেখেছে ভূমি

তোমার সৃষ্ট ভয় পাহাড় গড়ে তোলে
মানুষই তাতে বিজয় কেতন গাঁথে

বারুদের স্তূপে ঢেকে দিচ্ছ তুমি আ- বিশ্ব
ছুঁড়ে দিলাম তাতে তোমারই ঘরের চাবি

ভালবাসতে জানলে তোমাকে মানতাম ঈশ্বর
রক্তপিপাসু তুমি আরাধ্য নও কখনো আমার

ঘুমিয়ে গেলে ডাক দিওনা আমায়
শরীরে ফিরে আসতে হবে অসময়ে

শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫

শূণ্যজমি থেকে তোমাকে

অন্ধকার আবশ্যক আলোকের,
যতই অমিল থাকুক।
খোলস পাল্টে যায় শুধু
নিজের তাগিদে।
এসব নূতন কথা নয়।

আমরা কেবল বাড়িয়ে চলেছি-
বারুদের স্তূপ, আমাদেরই বিরুদ্ধে।
আর বর্জ্যে ডেকে ফেলছি চারপাশ ;
দিনশেষে একান্তে কঁকিয়ে উঠছে বুক।
এসব নূতন কথা নয়।

তুমি, আমি ভাবছি আজ যা লেখা হলো
সবই নতুন, ইতিহাস।
নিজেকে ভুলিয়ে রাখা, নিজেকে ধাঁধাঁয়
জড়ানো এসবও পুরোনো চাষাবাদ।
এসব নূতন কথা নয়।

বাজার ধরে রাখতে আমরা নষ্ট করতে
শিখে গেছি, অপরিমেয় খাদ্য !
আধেক পৃথিবী অভুক্ত,
আধেক পৃথিবী গৃহহীন...
এসব নূতন কথা নয়।

কে কাকে দোষ দেবে,
কে কার চুলকাবে পিঠ,
গন্ডি এঁকে ঘুরপাকও অনেক হলো,
নিজেকে বাঁচাতে নিজেই ভারাক্রান্ত।
এসব নূতন কথা নয়।

ঘুম থেকে জেগে ওঠা
আর প্রতিটি সূর্য্যোদয়
আমাদের বিপরীতে অবস্থান করছে।

শ্রীচরণেষু মা

মাঝে মাঝে মনে হয় কে যেন ডাকে,
কেউ যেনো পাশে এসে গায়ে হাত রাখলো,
বাতাসে ভেসে আসে নানা শব্দ, নি:শব্দ রাতে
সবাই যখন ঘুমে কাতর-
প্রায়ই আকাশের নিচে এসে বসি,
কখনো চাঁদ, কখনো অন্ধকার
খুলে দেয় সমস্ত দরজা-জানালা।

মা, বাড়ি ফিরতে আজকাল পথ হারিয়ে যাচ্ছে,
রাস্তার সব গাছ কেটে ফেলেছে গতিশীল শহর।
তুমিও কি হারিয়ে ফেলেছ বাড়ি ফেরার পথ ?
চারপাশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে,
আমরাও উঠে এসেছি নূতন বাড়িতে
তোমার প্রিয় প্রতিটি গাছ লাগিয়েছি বাগানে,
তবুও এক বিকট শূণ্যতা ঘিরে রয়েছে আমাদের।

বাবা, প্রায়ই বলে, আমি নাকি তোমার মতো,
আমি কিন্তু তাঁদের একা ফেলে যাইনি কোথাও।
কর্কট রোগের কথা শুনতে পেলে যতদূর পারি
ছুটে যাই, বলি, বাঁচার তাগিদ ধরে রাখ,
লড়াইটা জারি রাখ, তোমার সবটুকু দিয়ে।

বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চেয়ে
বড় শিল্প আর কিছু নেই।তুমি কি একথা
ভুলে গিয়েছিলে, মা !

ডায়রীর একটি ছেঁড়া পাতা

ভেতরে যেতে পারছি না,
পিছলে যাচ্ছে পা,
শ্যাওলায় ঢেকে যাওয়া বাড়িটি,
একদিন, দারুণ উজ্জ্বল ছিল।

জানালার কাঁচে এখনও লেগে আছে
প্রগাঢ় একটি চুম্বন,
ধূলো, কর্কট মুছে দিতে পারেনি,
তার উষ্ণতা।

ফেলে যাওয়া দিন আজ নিয়ে
এলো, দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে।
তার চেহারায় থমকে আছে
সময়, বয়েস এখনও সতেরো।

যত নাম ধরে ডাকি-
প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে
একাকী।
সে তো বধির ছিলো না !

পাখি আমার পাখির আমি

খোলা খাঁচা ছেড়ে উড়ে গিয়েছিল।
অনেকটা সময় কেটে গেল,
পাখি ফিরে এলো আজ হঠাৎ।
আমার লেখার টেবিলে বশে কি যেন
বিড়বিড় করছিলো একাকী,
মুখটা উজ্জ্বল আগের মতোই।

কিছু সময় কথা হলো
ভোরে, চা খেতে খেতে।
ফিরে আসবে বলে, উড়ে গেল পুনরায়।
সব জানালা-দরজা খোলা রাখতে
বলে, আজ কাজে বেড়িয়ে গেলাম।

যাবার সময় সে আচমকা একটি
পালক হাতে দিয়ে গেল,
গাড়ীর ড্যাশবোর্ডে তা সারাদিন
এলিয়ে রইলো,
এখন আমার সাথে বাড়ি ফিরছে।

রাস্তার বাতিগুলো আজ দুপুর রোদের
মতো আলো দিচ্ছে, সন্ধ্যের আগরতলায়
আমি নই কিশোর কুমার যেনো
আমায় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দৈব পিছু না নিলে আজ কিছুতেই যাবনা
ফিরে রাতে সংবাদের টেবিলে।

আজ শুধু পাখির গল্প শুনবো পাখির কন্ঠে, সারারাত

শনিবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৫

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ছেঁড়া চিরকূট


অনেক ভালবাসা রইলো তোমার খোঁপায় গোঁজা ফুলে,  
তোমার নোলকে রেখে দিলাম আমার উষ্ণ চুম্বন,
সন্তানদের স্কুল বাসে তুলে দিয়ে-
খাটে গড়িয়ে গড়িয়ে যখন পড়বে প্রিয় কবির বই
আমি ধূলো হয়ে জড়িয়ে থাকবো তোমায়
আর সন্ধ্যেতে যখন বেরুবে অফিস ফেরৎ স্বামীর সাথে
সান্ধ্য ভ্রমণে-
আমি তখন হাওয়া হয়ে উড়াবো, তোমার কপালের চুল
তুমি ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না,
আমি তোমাতে জড়িয়ে আছি
কলেজ ফেরৎ রাস্তায় ফুচকা খাচ্ছিলে বান্ধবীদের সাথে,
সেই প্রথম তোমাকে দেখা

তোমার কন্ঠস্বর আমি শুনেছি দূর থেকে বহুবার
আমাদের মধ্যে কথা হয়নি,
এমনকি পরিচয়ও হয়নি সামনাসামনি
এমনকি আমি তোমায় কাছে পেতে চাইনি কখনো
অথচ, লেখকের বই থেকে বেরিয়ে তুমি হেঁটে গেছ
আমাদের বাড়ীর অন্দরে-বাহিরে
আমি ছায়ার মতো হেঁটেছি তোমার পাশে ;
সেদিনও তুমি টের পাওনি, অন্যদিনের মতো

তোমার রচয়িতাকে আমি দেখিনি কখনো
কিন্তু এক জীবনে কত আর বইতে পারা যায়
একাকী
ভালোবাসার গল্প নয়
একটি গল্প ভালোবাসার ?

শুক্রবার, নভেম্বর ২৭, ২০১৫

স্বীকারোক্তি

শিয়রের পেছনে দাঁড়ালে
সন্ত্রাসী মনে হয়।
কখনো পেছনে কাউকে
সহ্য হয় না।
রোজ ভোরে নিজ চরণ দর্শণ,
পূবাকাশে চোখ রাখা আমার
আবাল্য বিলাসিতা।

রোজ রাতে বাড়ি ফেরার পথে
ডাস্টবিনে ফেলে আসি
অনেকটি অমাবস্যা। কখনো
আমি চাইনা, তোমার আঁচল
থেকে পূর্ণিমা খসে পড়ুক।
জ্যোৎস্নাময় তোমার মুখ দেখে
ঘুমুতে যাওয়া ভুল হয়না কখনো।

তারপরও হিমোগ্লেবিনের পরিমাপ
জোট সরকারের মতো,
বড্ড যন্ত্রনায় ফেলে দিচ্ছে বারবার !


বুধবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৫

একটি ময়নাতদন্ত সংবাদ

মৃত্যুর কথা ভেবে ক্লান্ত হতে চাইনা ;
অনিবার্য সব আমার দিকে ধাবিত হউক।
অমল ভান্ডে আমি জমিয়ে রাখি
প্রতিশোধ স্পৃহা।

আমার পিতাই আমার ঈশ্বর।
তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্ক
দু'জনই এড়িয়ে চলি, নিদারুণ।
অমিলতা আমাদের সেতুবন্ধ।

পেছন ফিরে দেখা কখনো ফিরে আসা নয়
নাভিমূলে দারুণ এক মোচড়,
বরং আড়চোখে তাকানো বহুমাত্রিক
নিখুঁত ভাঁজ এঁকে দেয় কপালে ।

উজ্জ্বল লালটিপ কখনোই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নয়
তা কেবল অন্ধকারকে দীর্ঘায়িত করে চলেছে,
সমাবেশ ফেরত মুখগুলোতে তাকালে
চোখ নেমে আসে পায়ের পাতায়।

হে সড়ক, তোমায় সষ্টাঙ্গ প্রণাম ।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত

অনেকগুলো প্রাণ চেয়ে আছে আকাশের দিকে
দিনরাত তাদের প্রতি সজাগ থাকতে হচ্ছে,
সদ্যজাতের মতো পরিচর্যায়
তাদের বেড়ে ওঠা দারুণ উত্তেজনাময়।

স্ত্রীর চোখেমুখে অমল হাসি অনেকটা দীর্ঘ,
এবার শীতে বরাবরের মতো-
পড়শিদের জানালাগুলোতেও ছড়িয়ে পরবে
আমাদের ছোট বাগানের রঙ।

মা, তোমার অাঁচল জেনো আগলে রেখেছে সব ;
বাবা, তোমার নামে বাড়ীর নামকরণ করেছে-
অলকাপুরী। সেখানে
তোমার অনুপস্থিতি বিকট এক শূণ্যতা।

তোমার হয়ে প্রক্সি দেয়ার কাজ মোটেই সহজ নয়।
বাবা, গতকাল সে দায়িত্ব দিতেই ডানকাঁধটা বেশ
টনটন করে উঠলো কিছুক্ষণেই। ক্লান্তি আমায় শত্রু
করে তুলতে পারে, অলকাপুরীতে সে সুযোগ নেই।

উত্তরাধিকার সূত্রে, বাবার বইয়ের আলমারিগুলো
আমার দিকে হেলে আছে অনেকদিন আগেই।

একটি আধেক স্বপ্ন ও হাহাকার

বাতাসের ভেতর ঢেউয়ের মতো আসছে নানা শব্দ
উঠোন, বারান্দা জুড়ে জায়গা কুলোচ্ছে না
দুয়ার খুলে সামনে এসে দাঁড়াতেই
সব নির্বাক, নি:শব্দ, চুপ
মুহুর্তে সব কোথায় মিলিয়ে গেল,
প্রচন্ড এক আলোক গোলক ছুটে চলল তীব্র গতিতে
একটানা চলার পর তা মিলিয়ে গেল,
সামনে এক কুয়াশামাখা সবুজ মাঠ
তাতে নানাজন হেঁটে বেড়াচ্ছে,
উজ্জ্বল সব সাদা পোশাক
কোনটাই চেনামুখ নয়
একটা বেঞ্চে কে একজন মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে
কালো চুলের আড়ালে তার একপাশের গাল দেখা গেল
ঠোঁটের কাছে একটি গাঁঢ় কালো তিল
খুব চেনা চেনা লাগলো দূর থেকে
ঘুরে তাকালো, ঠোঁট নাড়লো,
কিছু বললো, শোনা গেল না ;
একবার শুধু ডাকলাম, 'মা'
তারপরই একটা ঝাকুনি, মেয়ে বলছে-
'স্যারের বাড়ির সময় হয়ে গেছে ওঠো'।

আর কখনো ওইখানে ফিরে যাওয়া হলো না
কোনো কসরৎই কাজে এলো না
শুনতে না পাওয়া ওই অস্পষ্ট ধ্বনির
ভাষান্তর সম্ভব হলো না আজও!

ভৌতিক চরাচর

চারদিকে হিংসা, ধ্বংস, হাহাকার, 
কোলাহল,
বিকট শূণ্যতা !

এরই ফাঁকে কারা যেন বাতাসে 
ভাসায়ি চলে ভালবাসার গান,
তার গায়ে বিদ্রোহের চাপা গন্ধ !

রাজধানী, জাতীয় সড়ক, সংবাদপত্র
সভা-মিছিলের পদভারে
ক্লান্ত, বিমূঢ়, হতবাক্।

মিছিল ফেরৎ লোকজন দরদাম
শেষে বাজার বয়ে ফিরে যায়
নিজস্ব আস্তনায়, অভ্যাস মতো !

আশা ও কামনায় ফুরিয়ে ফেলা জীবন
নিয়ম করে একদিন মুছে যায়
রেশনকার্ডে।

ঠাকুর্দার বাবার নাম ক'জনা মনে করতে পারে !

আরশি কথা

তোমার কাছে যাব বলে হাত বাড়াইনি
তোমাকে ছুঁয়ে দেখব বলে হাত বাড়াইনি
বহু বছর যাবৎ আমায় অনুসরণ করে করে 
তুমি কতখানি ক্লান্ত 
তা শুধু দেখছি।

রূপকথা / ১

ডুবছি ক্রমাগত বিপুল
জলরাশির অতলে
কি জেনো টেনে নিচ্ছে
ভেসে ওঠার কোনো সুযোগ নেই

জলতলে বালির খাঁজে আটকে একটি নাকছাবি
তাতে কয়েক যুগের দীর্ঘশ্বাস
এইমাত্র অতিক্রম করলাম
বিসর্জনের দিন ঘাটের ভিড়ে কারা যেন বলাবলি
করছিলো, মায়ের মুখের সাথে নাকছাবিটা দারুণ মানিয়েছে

অইটুকু শুধু
মনে হলো, ঘূর্ণির পাকে সেঁধিয়ে যাবার আগে।


একান্তে

কোপাইতে মন চাইলো
বেধড়ক কোপালাম।
এবার শীতে বাগান ভরে যাবে 
নানা রঙে,
ছোট ছোট চারাগুলোর গায়ে
ভোরের শিশির
মনটাকে বড্ড নরম করে দেয় ;
প্রতিটির নামকরণ সারা হলে,
বাবার পায়চারী দেখবো, এবারকার
শীতের বিকেলে।

রবিবার, অক্টোবর ০৪, ২০১৫

খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে

কত কত মৃত্যু 
কত কত হাহাকার
কত কত জন্ম
কত কত জয়গান
সূচিত এই দিবারাত্রি

নিভু নিভু আগুন ছাড়া
কি আর ধরে রাখতে
জানে, 
কি আর ক্ষমতা অতি 
পরিচিত সাত সুরে

তবুও আসন পাতা হয়
তবুও ধূপধুনো জ্বলে
পামুড়ে গোল হয়ে বসে
অভ্যাসের গলায় ও
চির ধরে কখনো কখনো

শুদ্ধ ও কোমল জানে
কতটা গভীরে গেলে
উপরতলায় ফোটে
অনায়াসে, শ্রমের ফুল।

সোমবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫

কনফেশান

ব্যার্থতার ইতিহাস লিখি আমি
বৃক্ক তোমার সইতে পারলো না
অন্ধকার লিখবার আগে আমার
আয়ুষ্কাল তুমি ধারণ কর পিতা


হে পাহাড় তুমি জেগে থাক অনন্ত
বাঘের বাচ্চাগুলো তোমার টোলে
বেত খাক্, শুশ্রষা পেয়ে বাড়ুক
বেঁচে উঠুক ডুবন্ত সব মৌল স্বপ্ন

ভূমি, প্রেমে যতো কম্পন উঠুক
বিশ্বাস যতই টাল খাক্ দোলকে
তোমার পদচ্ছাপে পা গলানোর
প্রয়াস থেকে যোজন দূরত্বে আমি

আর কখনো লিখবো না তোমায়
টাকার প্রয়োজন, দ্রুত পাঠিয়ে
প্রণাম নিও।

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫

একটি বিশেষ ঘোষণা

বাবুদের চোখে ঢাঁই করা নানা ধরণের সিঁড়ি
একটি নামিয়ে এনে 
চল চেপে ধরি আকাশে 
ঈশ্বর নেমে এলে আজ পায়ে জুড়ে দেবো 
আইটেম সঙ্, ডিজে তোলরে ঝড় 
সব চিক্ মারা শরীর থেকে ঝরিয়ে দেবো 
নুন, দেখি কতদূর যেতে পারে প্ররোচক 

রাজপথ থেকে সমস্ত সতর্কী বার্তা নামিয়ে ফেলো
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ভরে দাও ক্ষয়রাতির হা-মুখ, 
পুলিশ তুমিও সাপ্তাহিক ছুটি দাবি রাখো, 
মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল 
একটি দিন পাহারা দিক সমস্ত অস্ত্রাগার  থানা, 
ট্রাফিক তুমি তুলে নাও সমস্ত সিগন্যাল, দেখো 
ভিআইপি কিকরে কঁকিয়ে কঁকিয়ে পার হয় 
স্মার্ট সিটির পথ খিস্তির ভান্ড উগরে দিয়ে 

আমাদের নুন আর ভাতের চিন্তা কোনোদিনই ফুরোবে না
আমাদের স্বাস্হ্য, শিক্ষা, বাসস্হানের সুরাহা করতে হারিয়ে
ফেলেছে যারা যৌবন তাদের গাল বেয়ে নেমে 
আসছে আজ ইলিশে তেল আর আমাদের বুক চিরে
দেখা হচ্ছে দলীয় পতাকার রং কতটা উজ্জ্বল, 
তাদের পায়েও কষে বেঁধে দাও ঘুঙুর, ডিজে তোমার 
জাদু হাতে তোলরে ঝড়
আজ সব চিক্ মারা শরীর থেকে ঝরিয়ে দেবো নুন 

সংরক্ষিত বনাঞ্চল যতই প্ররোচিত করুক।

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫

ওগো দু:খ জাগানিয়া

ঘুমিয়ে থাকলে সব শান্ততল্লাট জুড়ে 
সবাই জানে একথা। 
জানে নাঘুম ও জাগরণের মাঝে
চোখে কি করে ভিড়ে ভিড়ে থাকে
অগাধ অমলিন সব স্বপ্ন 

পাড়াতুতো এক নেতা ফাঁদ পেতে টুকে নেয়
ভুলভাল আর ফিরি করতে
বেড়িয়ে পরে পুরাতন পথ ধরে ধরে 
জানে নাতাকে দেয়া হয়েছে শুধু
সামান্য বহন ক্ষমতা 

একেবারে ঘুমিয়ে পরার আগে 
তোমায় চুমু খেতে চাই, 
একথা বুজিয়ে ফেলা দীঘির জলে
লিখে ভাসিয়ে দিলে আগরতলা শহর
কেঁপে কেঁপে ঢুকে পরে খাঁচায় খাঁচায়।

পাহাড়ের জলে অবিরাম কলকল অমল ধ্বনি
সমতলে লেপে থাকে সমূহ পতন ও কান্না।

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫

চলো কাটাকুটি খেলি

আমি যা আমি তাই
তুমি যা তুমি তাই
মাঝে কেন উঁকি দেয়
মানবিক কান্না?

জীবিতরা কোথায় পেলো
এই অনুনাসিক স্বর?

আনবিক খাঁচায় কে রাঁধে
কে ছড়ায় গন্ধ
আমার মতো
তোমার মতো?

ছায়ার শরীর জানে
আলোর দূরত্ব।

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫

অ-সুখ

পাহাড় ধরে রেখেছে বলে মুছে যায়নি, আমাদের সবুজ
পাহাড় ধরে রেখেছে বলে ভেঙে পরেনি, আমাদের আকাশ
নীচের গোপন কারসাজি, গোপন ফাঁদ, যতই দীর্ঘতা পাক।

তেষট্টি বছর শুধু ঋণ করে গেছে মূর্খ ও তার সভাসদরা
আর বাড়িয়ে তুলেছে অক্ষমতার গ্লানি। ওদের পালিশ মুখ,
বিপুল সঞ্চয়, চৌর্য্য প্রতিভা, যোজনার বরাদ্দে উজ্জ্বল।

কাকে তুমি বিশ্বাস করবে আর কাকে তুমি নেবে পাশে
বাজারে সব বিক্রি হতে বসে আছে ; গোটাকয়েক নচ্ছার
ছাড়া কে শোনে মাটির কান্না, আর অসুখী হয়?

পাহাড় ধরে রেখেছে বলে মুছে যায়নি, আমাদের সবুজ
পাহাড় ধরে রেখেছে বলে ভেঙে পরেনি, আমাদের আকাশ।

সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫

মুখোমুখি

কিছু মানুষের মুখ জেনো লেপ্টে থাকা ঝড়
কিছু মানুষের কন্ঠ জেনো বিনা মেঘে বজ্র
কিছু মানুষের হাত জেনো কদমতলের বাঁশি
কিছু মানুষের পা জেনো জেগে থাকা উল্লাস

আমার কোনো কিছুতে নেই তেমন কোনো সঙ্কেত
আমার আয়না জুড়ে এক অচেনা পাখি, দিনরাত
গেয়ে যায়, চিরচেনা. রোপনের গান, অক্লান্ত!

আজ তাকে গালি দিলাম জবরদস্ত
আর তার চোখ গোল গোল হয়ে
বেড়িয়ে এলো,
অনেক অনেক আমি!

কু-হক্ কথা

আগুনের কোনো শোক নেই।

চারপাশের কান্না, হতাশা, ক্ষোভ,
হাহাকার ক্রমশ: নামিয়ে ফেলছে,
আকাশ ঢেকে রাখা টুকরো কাপড়!

আগুনের কোনো শোক নেই।

কিন্তু তুমি জেনেবুঝে ভুল পড়ছো
আবহাওয়া সংবাদ অভ্যাসের বশে
আর নিজ বাগানে বাড়ছে বিক্ষোভ!

আগুনের কোনো শোক নেই।

তোমার ঝুল বারান্দায় নিজ গন্ধ
মুছে ফেলতে চাইছে, অতি যত্নের
কামিনী, এবার তুমি কাঁদলে খুব!

আর পাহাড় জুড়ে বিকট চিৎকার

আগুনের কোনো শোক নেই।
আগুনের কোনো শোক নেই।




আঁধারলিপি

বাক্ স্বাধীনতা চুরি যাচ্ছে,
শুধু মুখ দেখান, কথা বলবেন না।

শব্দের তেজষ্ক্রিয়তা বড়ো ভয়ানক,
প্লিজ, লেজে আগুন দেবেন না।

শুধু মনের ভেতর জেগে উঠুন, নি:শব্দে।

অঘুমে

বুদ্ধির চাষ তোমার
ঢের হলো,
এবার একটু
আলো দাও।

দু'এক পশলা বৃষ্টি
ঝড়ুক উঠোনে;
তুমিও তো-
দেখনি উদয়!

তোমার হাতে কত
কলকব্জা, নালিশ,
হা-ভাতে মরি
কপাল চাপড়াই!

তোমার জন্যেও
চাইছি এবার প্রভু,
এবার একটু
আলো দাও।


কু-চটি

১.
পা তেমন না হাঁটলেও, চোখ হাঁটে খুব,
পায়ের পাতায় জুড়ে দিয়ে-
নাম রেখেছি,-সর্বভূক।

২.
গায়ে তো লেগেছে হাওয়া
আরেকটু চালিয়ে ভাই
বটপাতা বড় ঝিরঝির দোলে।

৩.
দিনে কানা
রাতে কালা
জেগে সর্ষেফুল।

৪.
মনের ছানি চোখের ছানি
মাথার কিবা দোষ,
কাঁটাতারে বুক জুড়েছে-
এপাড়-ওপাড় খুশ্ ?

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫

জেনারেশন গ্যাপ

আমার ঠাকুর্দা, কুড়ি মিনিটের পথ হেঁটে যেতেন 
কুড়ি টাকা বাঁচাতে 
আমার বাবা, কুড়ি মিনিটের সেপথ পেড়িয়ে যান
সাইকেল চাপিয়ে 
আমি, ওইটুকু পথ পেড়িয়ে যাই-আসি হুস্ করে
পেট্রল পুড়িয়ে 
আমার সন্তান, তারচে’ ঢের বেশি পথ পেড়িয়ে
যায় নেটে, পলকে 

তুমিও চাইছো হাতের মুঠোয় সব তুলে নিতে
অথচ, কপাল চাপরিয়ে যাচ্ছো সমানে আর 
সব হাতের বাইরে চলে গেছে বলে চিৎকার 
করে করে সংসার করে তুলেছো বিষময়;   
যদি রাগ না করো তাহলে বলি, সময়ের মূল্য
দিতেই হবে, বিদ্যুৎ নিগমের বিল যতই তোমায় 
ক্ষেপিয়ে তুলুক। জিরো একাউন্টে পড়ে থাকা 
হে প্রিয় দেশবাসী এসো উচ্চারণ করি- 

আপনার উন্নতি সমান সমান দেশের উন্নতি।

বিকলাঙ্গ মিছিল

তাদের যেতে হয়, যেতে বাধ্য করা হয়। 
তারা যায়, গড়াতে গড়াতে যায় আর 
রাজপথ ঘোত্ ঘোত্ শব্দ তোলে 
চিরচেনা ক্ষুধার্ত হা-মুখে! 

তারা এভাবে চিরকাল বড় হতে থাকে
তাদের এভাবে চিরকাল বাড়তে দেয়া হয় 
ক্রমশ: গড়িয়ে গড়িয়ে ক্ষয় পেয়ে গেলে- 
একদিন নিশ্চুপ ডেকে নেয় শশ্মানের চুল্লি! 

তাদের ছাইয়ে ভরাট অসমতল ভূমি
অসময়ে ঝরে যাওয়া উইয়ের ডানা
সন্তর্পণে টেনে নিচ্ছে, অসহায় কান্না;
নেটজেন খোঁজে, ভূকম্পের আগামী।

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫

ফুসমন্তর

চোখ দু'টো বাবার মতো মুখটা অনেকটা মায়ের,
হাত-পা বেশ চলনসই, আহা, গোঁসাই জেনো
স্বয়ং এলেন!

নাকছাবিটা খুঁজে পেতে, বসত-ভিটে
পায়ের ধূলোয় ভরে দিলেন!

প্লিজ, ভুলবেন না প্লিজ, পা বাড়াতে
আপত:কালীন কাগজপত্তর সাথে নেবেন,
প্রবেশপথে থানাবাবুরা, দেখতে চাইবে, দেবেন।
চারদিকে যা ধূলো, কাঁদা, বালি!

ও হরি
আসছে দিন তোরই

ফোঁস করতে বারণ করেনি গোঁসাই।